করোনা ভাইরাস

করোনা মহামারীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যে খাবারগুলো প্রয়োজন

করোনা মহামারীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যে খাবারগুলো প্রয়োজন

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কমবেশি হলেও প্রায় দুই মাস ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে।

গ্রিন টি আসলেই করোনা, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে?

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যে খাবারগুলো খেতে হবে:

  • বিটা ক্যারোটিন: উজ্জ্বল রঙের ফল, সবজি। যেমন গাজর, পালংশাক, আম, ডাল ইত্যাদি।
  • ভিটামিন এ: গাজর, পালংশাক, মিষ্টি আলু, মিষ্টিকুমড়া, জাম্বুরা, ডিম, কলিজা, দুধজাতীয় খাবার।
  • ভিটামিন ই: কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, বাদাম তেল, বিচিজাতীয় ও ভেজিটেবল অয়েল, জলপাইয়ের আচার, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি।
  • ভিটামিন সি: আমলকী, লেবু, কমলা, সবুজ মরিচ, করলা ইত্যাদি।

দেখে নিন কেন ‘এবি’ ও ‘বি’ রক্তের গ্রুপের করোনা ঝুঁকি বেশি!

এ ছাড়া যে খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো। এ খাবারগুলো আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে তো বাড়িয়ে তুলবেই, সেই সঙ্গে আরও বিভিন্নভাবে আপনার শরীরকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে। সামগ্রিকভাবে উদ্ভিজ্জ খাবারই হলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সবচেয়ে ভালো উৎস, বিশেষ করে বেগুনি, নীল, কমলা ও হলুদ রঙের শাকসবজি ও ফল।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ কী কী। কিভাবে নিশ্চিত হবেন আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে?

  • সবজি: করলা (বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ), পারপেল/লাল পাতা কপি, বিট, ব্রোকলি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি।
  • শাক: যেকোনো ধরনের ও রঙের শাক।
  • ফল: কমলালেবু, মালটা, পেঁপে, আঙুর, আম, কিউই, আনার, তরমুজ, বেরি, জলপাই, আনারস ইত্যাদি।
  • মসলা: আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, গোলমরিচ।
  • অন্যান্য: শিম বিচি, মটরশুঁটি, বিচিজাতীয় খাবার, বার্লি, ওটস, লাল চাল ও আটা, বাদাম।
  • টক দই: এটি প্রোবায়োটিকস, যা শ্বাসযন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্র সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে। অন্যদিকে শাকসবজি, ফল, বাদামজাতীয় খাবার শরীরে নিউটোভ্যাক্স ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, যা স্টেপটোকোক্কাস নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
  • চা: গ্রিন টি, লাল চায়ে এল-থেনিন এবং ইজিসিজি নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনেক যৌগ তৈরি করে শরীরে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।
See also  করোনার অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমতি পেল ৭৭ প্রতিষ্ঠান, ফি ৭০০ টাকা

ডেঙ্গু জ্বর ও করোনার লক্ষণ এক হলেও পার্থক্য বুঝবেন কিভাবে?

এ ছাড়া ভিটামিন বি-৬, জিংক-জাতীয় খাবার (বিচিজাতীয়, বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, দুধ ইত্যাদি) শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির কোষ বৃদ্ধি করে। তাই এ ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে। উচ্চ মানের আমিষজাতীয় খাবার (ডিম, মুরগির মাংস ইত্যাদি) বেশি করে খেতে হবে।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের খুব ভালো কাজ পেতে হলে খাবার রান্নার সময় অতিরিক্ত তাপে বা দীর্ঘ সময় রান্না না করে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে।

ওপরের খাবারগুলো ছাড়াও নিউমোনিয়া প্রতিরোধে উচ্চ আমিষযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ও টিস্যু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে এবং পাশাপাশি নতুন টিস্যু তৈরি হবে। এর সঙ্গে দরকার পর্যাপ্ত ঘুম। অপর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম শরীরে কর্টিসল হরমোনের চাপ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তাই পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

এছাড়া রোগ প্রতিরোধক হিসেবে বিভিন্ন ধরণের মসল্লার বিকল্প মেলা ভার। যেমন- আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, লবন, গোলমরিচ, কালোজিরা ইত্যাদি। সাধারণত বাসায় নিজেদের নিত্যদিনের রান্নায় এইসব মসল্লার সমারোহ থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে। এছাড়া ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশিতে আদা, লবঙ্গ, তেজপাতা, দারুচিনি, দিয়ে মসল্লা চা খেলে খুব সহজেই এইসব সংক্রমণ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

এছাড়া প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এক কাপ অথবা দুই কাপ গ্রীন-টি রাখা যেতে পারে লেবু ও পুদিনা পাতা দিয়ে। এতে করে শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার আরও সমৃদ্ধশালী হবে।

See also  কুমিল্লা কি করোনার নতুন হটস্পট হচ্ছে? এক দিনে রেকর্ড ৮৫৩ শনাক্ত

পানি
এই করোনাকালে শরীর যেনো পানিশূন্য না হয়ে যায়, আবার পানি বাহিত কোনও রোগও যেন বাসা না বাধে শরীরে, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

যে সব খাবার খাওয়া নিষেধ

যে সব খাবার শরীরের উপকার না করে অপকারই বেশি করে সেইসব খাবার যতই পছন্দের তালিকায় থাকুক না কেন, এই মহামারি ঠেকাতে সেই সব খাবার ত্যাগ করাই শ্রেয়। এই সময়ে অতিরিক্ত চিনি ও চিনি যুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। এছাড়া বাইরের ফাষ্টফুড, জাং ফুড, সফট ড্রিঙ্কস, চিপস, স্ট্রিট ফুড যেমন- চটপটি, ফুসকা, ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার, যেমন- আইসক্রিম, অতিরিক্ত তেলে ভাজা পোড়া খাবার না খাওয়াই ভালো। কারণ এই সব খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তো বাড়াবেই না বরং শরীরে নানাবিধ রোগের সৃষ্টি করবে।

এছাড়াও নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:

বাড়ির পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্তকরণ

বাড়িতে সবাইকে নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস রপ্ত করতে হবে। প্রতিবার খাবার রান্না বা প্রস্তুতের আগে ও পরে, খাবার খাওয়ার আগে ও পরে, বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে, বাইরে থেকে বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। সাবান-পানি তাৎক্ষণিকভাবে না পাওয়া গেলে হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করুন। এ ছাড়া দরজার হাতল, নব, টেলিফোন, রিমোট, সুইচসহ যেসব বস্তু বারবার ব্যবহৃত হয়, সেগুলো নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

দূরত্ব বজায় রাখুন

এই সময় যেকোনো সর্দি–কাশি, জ্বর বা অসুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত এক মিটার বা ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। কেন? আর সব ফ্লুর মতোই এই রোগও কাশির ক্ষুদ্র ড্রপলেট বা কণার মাধ্যমে অন্যকে সংক্রমিত করে। তাই যিনি কাশছেন, তাঁর থেকে দূরে থাকাই ভালো। ইতিমধ্যে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। অসুস্থ পশুপাখি থেকে দূরে থাকুন।

See also  দেখে নিন কেন ‘এবি’ ও ‘বি’ রক্তের গ্রুপের করোনা ঝুঁকি বেশি!

নাক–মুখ স্পর্শ নয়

হাত দিয়ে আমরা সারা দিন নানা কিছু স্পর্শ করি। সেই বস্তু থেকে ভাইরাস হাতে লেগে যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন। অপরিষ্কার হাত দিয়ে কখনো নাক–মুখ–চোখ স্পর্শ করবেন না।

অবশ্যই-অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে

  • মাস্ক পরার আগে হাত (সাবান-পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড বা হ্যান্ড রাব দিয়ে) পরিষ্কার করে নিন।
  • মাস্ক পরার সময় এর সামনের অংশ ধরবেন না।
  • নাক ও মুখ মাস্ক দিয়ে ঢেকে ফেলুন এবং মনে রাখবেন, মুখ ও মাস্কের মধ্যে যেন কোনো ফাঁকা স্থান না থাকে।
  • ব্যবহারের সময় মাস্ক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। আর যদি স্পর্শ করেন, তবে হাত (সাবান-পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড বা হ্যান্ড রাব দিয়ে) পরিষ্কার করে নিন।
  • ব্যবহৃত মাস্কটি আর্দ্র বা ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে মনে হওয়ামাত্রই তা বদলে ফেলুন। ডিসপোজিবল বা একবার ব্যবহারের জন্য তৈরি মাস্ক বারবার ব্যবহার করবেন না।
  • মাস্ক অপসারণের সময় এর সামনের অংশ স্পর্শ করবেন না। মাস্ক খুলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তা ঢাকনা দেওয়া ময়লার বাক্সে ফেলুন।
  • মাস্ক অপসারণের পর হাত পরিষ্কার করে নিন।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সতর্কতা

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে তা প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য তথ্য অধিদপ্তরের তথ্যবিবরণীতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিদেশফেরত ব্যক্তিদের অবশ্যই ১৪ দিন বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছে রোগতত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

করোনাভাইরাস সম্পর্কে যেকোনো পরামর্শ বা উপদেশের জন্য উল্লেখিত হটলাইনে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে : ৩৩৩, ০১৯৪৪৩৩৩২২২, ০১৪০১১৮৪৫৫১; ০১৪০১১৮৪৫৫৪; ০১৪০১১৮৪৫