এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল তৈরির নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো অনুমোদন হয়নি। ফলে চলতি মাসে এই পরীক্ষার ফল প্রকাশে সম্ভাবনা নেই। আগামী বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি ফল প্রকাশ করা হতে পারে বলে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম আমিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল তৈরির নীতিমালা অনুমোদন হলে ফলাফল তৈরিতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। একই কথা বলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব তপন কুমার কুমার।
করোনা পরিস্থিতির কারণে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিল করা হয়। অপেক্ষমাণ সব পরীক্ষার্থীকে অটোপাস দেয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ডিসেম্বরের মধ্যে এ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের কথাও জানান তিনি।
পাশাপাশি অটোপাশের ফল তৈরিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে আট সদস্যের গ্রেড মূল্যায়ন টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। চলতি মাসের শুরুতে কমিটি ফলাফল তৈরিতে জিপিএ গ্রেড নির্ণয়ের বেশ কয়েকটি প্রস্তাবের সমন্বয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার ফল পিছিয়ে যাচ্ছে। তার অসুস্থার কারণে টেকনিক্যাল কমিটির প্রস্তাবিত গাইডলাইন অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেটি অনুমোদন হলে তার আলোকে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ফলাফল তৈরি করা হবে।
টেকনিক্যাল কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী, জেএসসি পরীক্ষার ফলে ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলে ৭৫ শতাংশ নম্বর মূল্যায়ন করা হবে। তবে যারা জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি তাদের ক্ষেত্রে এসএসসির ফলকে কেন্দ্র করে নম্বর নির্ধারণ করা হবে। বিষয়ভিত্তিক উন্নতির ক্ষেত্রে আগের ক্লাসের সেই বিষয়ের ফল মূল্যায়ন করা হবে। আগের দুই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও বিষয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ নম্বর না থাকলে সে ক্ষেত্রে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ থেকে অনেকে পিছিয়ে পড়তে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল তৈরি করতে গিয়ে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। এরমধ্যে প্রথমেই আসে যে দুই পরীক্ষার ভিত্তিতে গড় ফল তৈরি হচ্ছে সেটি। কেননা, জেএসসি পরীক্ষার সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের বেশিরভাগ বিষয়েরই কোনো মিল নেই। বাংলা, ইংরেজি, আইসিটির মতো তিনটি বিষয়ের সঙ্গে যে মিল আছে, সেটা নিতান্তই প্রাথমিক পর্যায়ের। এটার সঙ্গে এইচএসসির তুলনা ও সম্পর্ক স্থাপন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। অপরদিকে এসএসসি ও দাখিল পাসের পর শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিভাগ পরিবর্তন করে। এ ক্ষেত্রে বিজনেস স্টাডিজ ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা মানবিক বিভাগে যায়। আবার মাদরাসায় দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনাল পাস করা অনেকে কলেজে ভর্তি হয়ে থাকে। বিভাগ ও ধারা (মাদরাসা ও কারিগরি থেকে কলেজে) পরিবর্তনকারী শিক্ষার্থীদের ফল তৈরিও আরেক চ্যালেঞ্জ।
উল্লেখ্য, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে নিয়মিত ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন। অনিয়মিতদের মধ্যে এক বিষয়ে ফেল করা ১৬ হাজার ৯২ জন, ২ বিষয়ে ফেল করা ৫৪ হাজার ২২৪ জন, সব বিষয়ে ফেল করা ৫১ হাজার ৩৪৮ জন, মানোন্নয়ন ১৬ হাজার ৭২৭ জন এবং প্রাইভেট পরীক্ষার্থী ৩৩৯০ জন। সাতটি বিষয়ে ১৩টি পত্রে পরীক্ষায় বসতে হয় শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে বাংলা ও ইংরেজির দুটি এবং আইসিটির একটিসহ ৫ বিষয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাসহ সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হয়। বাকিগুলো বিভাগভেদে পছন্দমতো ঐচ্ছিক বিষয় থাকে