Site icon ঢাকা বুলেটিন

মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু ২০ মার্চ

মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু ২০ মার্চ

মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু ২০ মার্চ

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠসূচির আলোকে অ্যাসাইনমেন্ট ও মূল্যায়ন নির্দেশনা-২০২১ জারি করেছে। আগামী ২০ মার্চ থেকে এ নির্দেশনার আলোকে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে। প্রত্যেক সপ্তাহ শুরুর দুই দিন আগে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ও নির্ধারিত কাজ প্রকাশ করা হবে।

মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। বুধবার (১০ মার্চ) এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের নির্ধারিত পাঠ্যসূচির কার্যক্রম বছরের শুরুতে আরম্ভ করা হয়ে ওঠেনি। এ কারণে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিকে পুনর্বিন্যাস করে শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে গত বছরের মতো ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ধারাবাহিকভাবে অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজের মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজের মাধ্যমে তাদের অর্জিত শিখন ফল মূল্যায়ন করা হবে। পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে কোন সপ্তাহে শিক্ষার্থীর কী মূল্যায়ন করা হবে সে বিবেচনায় অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহ শুরুর দু’দিন আগে মাউশির ওয়েবসাইটে অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজগুলো দিয়ে দেওয়া হবে এবং সপ্তাহ শেষে সেগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে (সরাসরি বা অনলাইনে) নতুন অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ করবে।

শিক্ষকের জন্য নির্দেশনা

প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে অ্যাসাইনমেন্ট দিতে হবে। নির্ধারিত বিষয়গুলোর প্রস্তাবিত অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়া, মূল্যায়ন করা, মূল্যায়নকারীর মন্তব্যসহ শিক্ষার্থীদের দেখানো এবং প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের কাজটি নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। এ কার্যক্রমে প্রতিটি শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সব মূল্যায়ন যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। অ্যাসাইনমেন্টের আওতায় ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন, নির্দেশনা অনুসরণ করে নিবন্ধ, রচনা, অনুচ্ছেদ লিখন, সাহিত্য পর্যালোচনা, কেইস স্টাডি, পরীক্ষণ, সারসংক্ষেপ, সারাংশ লিখন, মডেল, চার্ট, অঙ্কন প্রতিবেদন প্রণয়ন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আসাইনমেন্টের নির্দিষ্ট ধরনের জন্য নির্ধারিত মূল্যায়ন নির্দেশনা অনুযায়ী মূল্যায়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট নির্ধারিত সাদা কাগজে স্বহস্তে লিখে জমা নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। অভিভাবক বা তার প্রতিনিধি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতি সপ্তাহে একদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করবেন এবং জমা দেবেন। শিক্ষার্থীর লেখায় তার মৌলিক চিন্তা, কল্পনা ও সৃজনশীলতা প্রতিফলিত হয়েছে কিনা শিক্ষক তা বিশেষভাবে লক্ষ্য করবেন। প্রশ্ন উত্তরে প্রয়োজনীয় তথ্য, তত্ত্ব, ধারণা, সূত্র ব্যাখ্যা ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করে তার সব দুর্বল দিকগুলো খাতায় চিহ্নিত করতে হবে এবং এমনভাবে তার মন্তব্য লিপিবদ্ধ করতে হবে যাতে শিক্ষার্থী তার সবল ও দুর্বল দিকগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারে। মূলায়ন করার পর শিক্ষক তার মতামতসহ অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীদের দেখানোর ব্যবস্থা করবেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে সেটি ফেরত এনে প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ করবেন।

শিক্ষক একটি অ্যাসাইনমেন্ট সামগ্রিক মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে অতি উত্তম, উত্তম, ভালো ও অগ্রগতি প্রয়োজন- এরূপ মন্তব্য করবেন। মন্তব্য করার ক্ষেত্রে নির্দেশক-

অতি উত্তম: পরিপূর্ণমাত্রায় বিষয়বস্তু সঠিক ও ধারাবাহিক। তথ্য, তত্ত্ব , ধারণা, সূত্র ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। লেখায় লক্ষণীয় মাত্রায় নিজস্বতা ও সৃজনশীলতা।

উত্তম: অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু সঠিক ও ধারাবাহিক। তথ্য, তত্ত্ব, ধারণা, সূত্র ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঙ্গতিপূর্ণ। লেখায় আংশিক নিজস্ব ও সৃজনশীলতা।

ভালো: বিষয়বস্তুর সঠিকতা থাকলেও ধারাবাহিকতার অভাব। লেখায় তথ্য, তত্ত্ব, ধারণা, সূত্র ইত্যাদি আংশিকভাবে সঙ্গতিপূর্ণ। লেখায় সামান্য মাত্রায় নিজস্বতা ও সৃজনশীলতা।

অগ্রগতি প্রয়োজন: বিষয়বস্তুর সঠিক ও ধারাবাহিকতার অভাব। লেখায় তথ্য, তত্ত্ব, ধারণা, সূত্র ইত্যাদি সঙ্গতির অভাব। লেখায় নিজস্বতা ও সৃজনশীলতা অনুপস্থিত।

অভিভাবকগণের প্রতি পরামর্শ

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে উৎসাহিত করা। শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন প্রক্রিয়া তাদের শিখন অর্জন যাচাই এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের ঘাটতি রয়েছে তা নিরূপণ করা। শিক্ষার্থী নিজে যাতে এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে তা নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীর অনুধাবন ক্ষমতা ও সৃজনশীলতা বাড়ানোর জন্য তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা। শিক্ষার্থী যেন সময়মত অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করে এবং তা যেন নির্ধারিত সময়ে জমা দেয় তা নিশ্চিত করা। নোট, গাইড, অনলাইন বা অন্য কারো লেখা থেকে হুবহু লিখে অ্যাসাইনমেন্ট দিলে তা বাতিল হবে। তাই শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতো করে লেখার প্রতি উৎসাহিত করা।

শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনা

শিক্ষার্থীদের শিখনফল অর্জনই মূল উদ্দেশ্য। পরবর্তী শ্রেণির পাঠ গ্রহণের ক্ষেত্রে এটি সুবিধা দেবে। তাই এটি অনুসরণ করা জরুরি তা বিবেচনা করতে হবে। অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে এনসিটিবি প্রণীত ও প্রকাশিত ২০২১ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক ব্যবহার করলেই চলবে। মূল্যায়নের ক্ষেত্র শিক্ষার্থীর নিজস্বতা, স্বকীয়তা ও সৃজনশীলতা যাচাই করা হবে। তাই নোট, বই বা অন্যের লেখা দেখে অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ জমা দিলে তা বাতিল হয়ে যাবে এবং পুনরায় সেই অ্যাসাইনমেন্ট প্রণয়ন করে জমা দিতে হবে। অ্যাসাইনমেন্ট নিজের হাতে লিখতে হবে। এতে হাতের লেখার যেমন অনুশীলন হবে তেমনি বিষয়টি বুঝতেও সুবিধা হবে। আসাইনমেন্ট লেখার ক্ষেত্রে যে কোনো কাগজ ব্যবহার করলেই চলবে। অ্যাসাইনমেন্টের প্রথম পৃষ্ঠায় শিক্ষার্থীর নাম, শ্রেণি, আইডি, বিষয় ও অ্যাসাইনমেন্টের শিরোনাম স্পষ্টভাবে লিখতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, অ্যাসাইনমেন্ট ধারাবাহিকভাবে প্রতি সপ্তাহে মাউশির ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ই-মেইলে পাঠানো হবে। নির্দেশনায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জন্য নির্দেশনা দেওয়াসহ মনিটরিংয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড দেখে অ্যাসাইনমেন্ট করতে নিষেধ করেছে অধিদপ্তর। নোট–গাইড দেখে অ্যাসাইনমেন্ট করা হলে তা বাতিল করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আবারও সেই অ্যাসাইনমেন্ট করে জমা দিতে হবে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বিস্তারিত পাওয়া যাচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে (http://www.dshe.gov.bd)।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। এ বছরের ২৯ মার্চ পর্যন্ত ছুটি আছে। ৩০ মার্চে স্কুল কলেজ খোলার কথা রয়েছে।

Exit mobile version