Site icon ঢাকা বুলেটিন

৩৩ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আইসিইএস’র প্রতিবেদনকে ঘিরে বিভ্রান্তিকর, উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা তথ্য প্রচার

৩৩ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আইসিইএস’র প্রতিবেদনকে ঘিরে বিভ্রান্তিকর, উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা তথ্য প্রচার

৩৩ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আইসিইএস’র প্রতিবেদনকে ঘিরে বিভ্রান্তিকর, উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা তথ্য প্রচার

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ঢাকা বুলেটিন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো কানাডা সরকারও শিক্ষার্থীদের জন্য নানা ধরনের বৃত্তির ব্যবস্থা করে থাকে। শিক্ষার মান, স্কলারশিপ প্রাপ্তি, বাৎসরিক টিউশন ফি, আবাসন সুবিধা, শিক্ষার্থীদের আয়ের পথ এবং শিক্ষাজীবন শেষে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগসহ অন্য বিষয়গুলো বিবেচনায় কানাডা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য অপার সম্ভাবনাময় দেশ। বর্তমানে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

কিন্তু সম্প্রতি ‘কানাডায় ভর্তি হতে পারবে না বাংলাদেশের ৩৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা’ শিরোনাম দিয়ে ভুল ও বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্যমূলক তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডেনশিয়াল ইভালুয়েশন সার্ভিস (আইসিইএস)-এ ইংরেজিতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্যমূলক ভুল অনুবাদও করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের কয়েকটি অখ্যাত ও স্বল্পপরিচিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করলেও বহুল পঠিত মূল ধারার কোনো পত্রিকা বা বহুল প্রচারিত কোন অনলাইন সংবাদ মাধ্যম তা প্রকাশ করেনি। 
সম্ভবত আইসিইএস-এর কাজের পরিধি  সীমিত হবার কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পিআর আবেদনকারীদের ক্রেডেনশিয়াল ইভালুয়েশন সার্ভিস দিতে পারছে না। এখানে উল্লেখ্য যে, ভারতের বহু বিশ্ববিদ্যালয়েরও ক্রেডেনশিয়াল ইভালুয়েশন সার্ভিস দিতে পারবে না বলে আইসিইএস তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। 

বিশিষ্টজনদের বক্তব্য

কেন এই তালিকা এবং এর ভিত্তি কী- এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘প্রকাশিত তালিকাটি কানাডা সরকার অনুমোদিত কিছু নয়। তাই চিন্তার কারণ নেই। এ বিষয়ে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। 

আইসিইএস-এর ক্রেডেনশিয়াল ইভালুয়েশন সার্ভিস সম্পর্কে কথা হয় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রফেসর এস.এম.কে নাজমুল হকের সাথে, ‘তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, আসলে সংবাদটি নিয়ে ভূল তথ্য দেয়া হয়েছে, আইসিইএস কর্তৃপক্ষ তাদের ওযেবসাইটে কোথাও উল্লেখ করেনি যে, উল্লেখিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা বা পিআরের জন্য কানাডাতে যেতে পারবে না। তাদের বক্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিইএস একাডেমিক ক্রেডেনশিয়াল ইভালুয়েশন সার্ভিস দিতে পারবে না। এটা হয়তো তাদের কাজের সীমাবদ্ধতা। কানাডাতে উচ্চশিক্ষা বা পিআর কার্যক্রমের জন্য একাডেমিক ক্রেডেনশিয়াল ইভালুয়েশন সার্ভিস প্রদান করে থাকে এমন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের মাধ্যমে আমাদের দেশের  শিক্ষার্থীরা ক্রেডেনশিয়াল ইভালুয়েশন সার্ভিস সম্পন্ন করতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, ওয়ার্ল্ড এডুকেশন সার্ভিসের (ডাব্লিউইএস) মাধ্যমেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্রেডেনশিয়াল ইভালুয়েশন সার্ভিস সম্পন্ন হয়ে থাকে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে কানাডাতে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছেন এবং অনেকে শিক্ষারত রয়েছেন। কাজেই এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই’। 

বিসিআইটি ও আইসিইএস-এর পরিচয় কি?

ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিসিআইটি) বা British Columbia Institute of Technology- BCIT হচ্ছে কানাডার একটি কলেজ পর্যায়ের কারিগরি (পলিটেকনিক) প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষার উপর ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে থাকেন। এর মোট ৫ টি ক্যাম্পাস রয়েছে। ছড়িয়ে পড়া সংবাদের ভিত্তিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিসিআইটি) -এর ক্রেডিট মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিন্সিয়াল ইভাল্যুয়েশন সার্ভিস (আইসিইএস) বা International Credential Evaluation Service (ICES) । সাধারণত প্রতিষ্ঠানটি ভর্তির ক্ষেত্রে ক্রেডিট মূল্যায়ন করে থাকে। আইসিইএস বাংলাদেশের ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিসিআিইটিতে আবেদন করতে পারবে না বলে তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আর এটি নিয়েই বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

একাডেমিক ডকুমেন্ট ক্রেডিনশিয়াল কোথায় করা যায়

জানা যায়, প্রতিটি শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, মার্কশিটসহ অন্যান্য তথ্য বা ডকুমেন্ট ক্রেডিনশিয়াল করতে হবে। আর এ ক্রেডিনশিয়াল করার গাইড লাইন কানাডার ইমিগ্রেশনের সরকারি ওয়েবসাইটে (http://www.cic.gc.ca/) দেয়া আছে। এছাড়াও তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যে কোন দেশের শিক্ষার্থীরা কানাডায় উচ্চশিক্ষা, জব বা ইমিগ্রেশন সার্ভিস নিতে ইচ্ছুকদের কানাডার বহুল পরিচিত আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে; সেগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশি সরকারী বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত ডিগ্রির মূল্যায়ন করতে পারেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো,

মূলত: ওয়ার্ল্ড এডুকেশন সার্ভিস (ডাব্লিউইএস) এবং সিইএস-এর মাধ্যমেই বাংলাদেশের সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অর্জিত ডিগ্রির মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, স্টুডেন্ট ভিসা ও স্কলারশিপের সাথে বিসিআইটি’র আইসিইএস কর্তৃক প্রকাশিত এই বাংলাদেশি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির তালিকার কোনো সম্পর্ক নাই। একজন শিক্ষার্থী কানাডায় উচ্চশিক্ষা বা পিআর এপ্লিকেশনের সময় আইসিইএস বাদে অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের অর্জিত ডিগ্রির ইকুইভ্যালেন্স করিয়ে নিতে পারেন।

প্রসঙ্গত, কানাডার সরকারের অধিকাংশ বৃত্তি কেবল কানাডার নাগরিকদের জন্য আবার কিছু বৃত্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আবেদন করার সুযোগ থাকে। তবে আন্তর্জাতিক বৃত্তি হলেও সেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কিছু বৃত্তি কেবল ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর জন্য, কিছু বৃত্তি ক্যারিবীয় দেশগুলো জন্য আবার কিছু বৃত্তির ক্ষেত্রে সবদেশের শিক্ষার্থীদেরই আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়। কিছু কিছু বৃত্তি আবার কানাডা এবং কানাডার বাইরের সবদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য।

লিস্টে প্রদর্শিত বাংলাদেশী ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীগণ নিজেদের ডিগ্রি নিয়ে কানাডায় পড়তে আসতে পারবেন; এটা নিয়ে চিন্তিত হবার কিছুই নেই। স্টুডেন্ট ভিসা ও স্কলারশিপের সাথে বিসিআইটি-এর আইসিইএস কর্তৃক প্রকাশিত এই বাংলাদেশী ইউনিভার্সিটির লিস্ট এর কোনো সম্পর্ক নাই।

Exit mobile version