যাঁরা প্রত্যেকদিন প্রচুর পরিমাণে মাছ-মাংস খান, তাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাবার ঝুঁকি বেশি। মদ্যপান ও কার্বোনেটেড কোলা জাতীয় ঠাণ্ডা পানীয় নিয়ম করে খেলেও ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে। স্বাভাবিকের থেকে বেশি ওজন হলেও ঝুঁকি থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা কিছুটা বংশগত। ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার ঝুঁকি বেশি। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, কিডনির রোগ, ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েডিজমও, ক্যান্সার বা কেমোথেরাপি ও চর্মরোগ হলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে।
সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৭ মিলিগ্রাম এবং নারীদের ৬ মিলিগ্রাম পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড থাকা উচিত। পরিমাণ এর বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং অবশ্যই খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।
হাইপারইউরিসেমিয়া বা ইউরিক এসিডে যেসব খাবার পরিহার করতে হবে
- অধিক চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া যাবে না। যেমন : গরুর মাংস খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস, মহিষের মাংস ইত্যাদি।
- অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জাতীয় মাংস (অর্গান মিট) খাওয়া যাবে না। যেমন : লিভার, কলিজা, মগজ, জিহ্বা ইত্যাদি।
- খোসাযুক্ত প্রাণী পরিহার করতে হবে। যেমন : চিংড়ি মাছ, শামুক, কাকড়া। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
- সব রকমের ডাল, বাদাম, মটরশুটি, সিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
- কিছু কিছু শাকসবজি খাওয়া যাবে না। যেমন : পালং শাক,পুঁই শাক, ফুল কপি ব্রকোলি, মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়শ , পাকা টমেটো ইত্যাদি। এছাড়া মাশরুমও খাওয়া যাবে না।
- এলকোহোল, ক্যাফেন জাতীয় বেভারেজ খাওয়া যাবে না। যেমন : চা, কফি, কোমল পানীয়, কারো ক্ষেত্রে চকোলেট খাওয়া যাবে না।
- মিষ্টি ফলে ফ্রুকটোস থাকে যা ইউরিক এসিড স্ফটিকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্ফটিককে বড় করে দেয়। তাই মিষ্টি ফল পরিহার করাই ভালো।
ইউরিক এসিডে যেসব খাবারে বাধা নেই
- চর্বিহীন মাংস খেতে হবে। যেমন : মুরগির মাংস। মাছ, কুসুম ছাড়া ডিম পরিমাণ মতো খাওয়া যাবে।
- অধিক আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন : সবজি-শাক ইত্যাদি। এই আঁশ স্ফটিকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শরীর থেকে মল আকারে বের হয়ে যায়।
- এন্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন : লেবু চা, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল (পেয়ারা, আমলকি, কমলা, মাল্টা), গ্রিন-টি ইত্যাদি খেতে হবে।
- এই সময় চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণ পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।
কারা ইউরিক এসিডে বেশি আক্রান্ত হন
- যাদের বংশে বাতের সমস্যা আছে তারা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
- যারা এলকোহল গ্রহণ করে।
- যারা প্রোটিন জাতীয় খাবার চাহিদার তুলনায় বেশি খেয়ে থাকে এবং শাক সবজি কম খায়।
- কিছু কিছু ওষুধ রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যেমন : ডাই ইউরেটিক মেডিসিন।
- যাদের উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, হৃদরোগের সমস্যা আছে তাদের ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।
- যাদের ওজনাধিক্য রয়েছে তারাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
- যারা পানি কম পান করে তাদের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা আছে।
ইউরিক অ্যাসিড কমাবেন কীভাবে?
- ডায়েট চার্ট মেনে খান। প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। ডায়েটে যা রাখবেন-
- আপেল সিডার ভিনেগার : ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে দুর্দান্ত উপকারী আপেল সিডার ভিনেগার। এক গ্লাস পানির সাথে ৩ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার খান নিয়মিত।
- চেরি : চেরিতে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী উপাদান। যা ইউরিক অ্যাসিড জমতে বাধা দেয়। এতে ব্যথা এবং ফোলাভাব কমে।
- বেরি : চেরি ছাড়াও স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি এবং জামে প্রদাহ-বিরোধী গুণ রয়েছে। উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড নিরাময়ে এই ফল কার্যকর।
- লো-ফ্যাট দুগ্ধজাত পণ্য : দুগ্ধজাত পণ্য শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ায় বলে মনে করা হয়। দুধের পরিবর্তে সয়া বা বাদাম দুধ বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন। যা প্রোটিন সমৃদ্ধ।
- অলিভ অয়েল : অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করুন। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- গ্রিন টি : গ্রি টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে। গ্রিন টি খেলে ইউরিক অ্যাসিড যেমন কমে, তেমন গাঁটের ব্যথার উপশমও হয়।
- লেবু : লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন পানিতে লেবুর রস দিয়ে খান। এতে উপকার পাবেন।
- প্রচুর পানি পান করুন : পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড বেরিয়ে যেতে পারবে। নির্দিষ্ট সময় পর পর পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- ফ্রেঞ্চ বিনস : দিনে দু’বার ফ্রেঞ্চ বিনসের রস খেলে ইউরিক অ্যাসিড কমে যায়। ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে এটি বেশ কার্যকর।
সম্ভাব্য ডায়েট চার্ট –
ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার মিলিয়ে মোট ক্যালোরি ১৬০০ ক্যালোরি যুক্ত খাবার খাবেন।
প্রোটিন = ৬০ গ্রামের বেশি নয়।
ফ্যাট = ৪৫ গ্রামের মধ্যে।
ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে উল্লিখিত শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।