রসুন হল পিঁয়াজ জাতীয় একটি ঝাঁঝালো সবজি যা রান্নার মশলা ও ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পেটে রসুন খাওয়া হলে এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক এর মতো কাজ করে। সকালে ব্রেকফাস্টের আগে রসুন খেলে এটি আরও কার্যকরীভাবে কাজ করে।খালি পেটে রসুন খেলে এমন কিছু উপকার হয়, যেটা অন্য খাবারের সাথে রান্না করা অবস্থায় খেলে হয় না। এটি শুধু বিভিন্ন ধরণের রোগ দূরই করে না, পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। অসংখ্য মানুষ যারা উচ্চ রক্তচাপের শিকার তারা, রসুন খাওয়ার ফলে তাদের উচ্চ রক্তচাপের কিছু উপসর্গ উপশম হবার ফল পান। রসুন খাওয়ার ফলে তারা শরীরে ভাল পরিবর্তন দেখতে পায়।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা রসুনে উপাদান বিদ্যমান থাকে-আর্দ্রতা: ৬২.০০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেড : ২০.৮০ গ্রাম, প্রোটিন : ৬.৩০ গ্রাম, আয়রন : ১.২০ মিলিগ্রাম, কপার : ০.৬৩ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ : ০.৮৬ মিলিগ্রাম, ফসফরাস : ৩১০.০০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম : ৩০.০০ মিলিগ্রাম, জিংক : ১.৯৩ মিলিগ্রাম, রিবোফেবিন : ০.২৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিস সি : ১৩.০০ মিলিগ্রাম। চলুন তাহলে জেনে নেই রসুনের কিছু স্বাস্থ্যকর উপকারীতা সম্পর্কে- বিভিন্ন রোগে প্রয়োগ-আঘাত এবং বাতের যন্ত্রণায় : এ দুই অবস্থায় রসুনের তেল মালিশ এবং প্রলেপ দিলে যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। অনেক সময় বাতও সম্পূর্ণ সেরে যায়।
আসুন দেখে নেই খালি পেটে রসুন খাবার উপকারিতা কি কিঃ
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : অসংখ্য মানুষ যারা উচ্চ রক্তচাপের শিকার তারা দেখেছেন, রসুন খাওয়ার ফলে তাদের উচ্চ রক্তচাপের কিছু উপসর্গ উপশম হয়। রসুন খাওয়ার ফলে তারা শরীরে ভাল পরিবর্তন দেখতে পায়।
- শরীরকে ডি-টক্সিফাই করে : অন্যান্য ঔষধের তুলনায় শরীরকে ডি-টক্সিফাই করতে রসুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রসুন প্যারাসাইট, কৃমি পরিত্রাণ, জিদ, সাঙ্ঘাতিক জ্বর, ডায়াবেটিস, বিষণ্ণতা এবং ক্যান্সার এর মত বড় বড় রোগ প্রতিরোধ করে।
- প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক : গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পেটে রসুন খাওয়া হলে এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক এর মতো কাজ করে। সকালে নাস্তার পূর্বে রসুন খেলে এটি আরও কার্যকরীভাবে কাজ করে। তখন রসুন খাওয়ার ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো উন্মুক্ত হয় এবং রসুনের ক্ষমতার কাছে তারা নতিস্বীকার করে। তখন শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াসমূহ আর রক্ষা পায় না।
- যক্ষ্মা প্রতিরোধক : আপনার যদি যক্ষ্মা বা টিবি জাতীয় কোন সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে সারাদিনে একটি সম্পূর্ণ রসুন কয়েক অংশে বিভক্ত করে বার বার খেতে পারেন। এতে আপনার যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে সহায়তা পাবেন।
- ঠান্ডা ও জ্বরের মহৌষধ: প্রায়ই ঠান্ডা ও জ্বরে পড়েন এমন ব্যক্তিদের জন্য রসুন হতে পারে এক মহৌষধ। শরীর থেকে জ্বর আর ঠান্ডা দূর করতে প্রতিদিন দু-তিন কোয়া রসুন কাঁচা খেতে হবে। এ ছাড়া রান্না করা বা চায়ের সাথেও রসুন খেতে পারেন। আর রসুনের গন্ধ খারাপ লাগলে এর সাথে আদা ও মধু মিশিয়ে নেওয়া জেতে পারে। এভাবে নিয়মিত সেবনে ঠান্ডা ও জ্বর শুধু সাময়িক দূর হবে না বরং শরীরে এগুলোর প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়বে।
- অন্ত্রের জন্য ভাল : খালি পেটে রসুন খাওয়ার ফলে যকৃত এবং মূত্রাশয় সঠিকভাবে নিজ নিজ কার্য সম্পাদন করে। এছাড়াও, এর ফলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয় যেমন- ডায়রিয়া। এটা হজম ও ক্ষুধার উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এটি স্ট্রেস দূর করতেও সক্ষম। স্ট্রেস বা চাপের কারনে আমাদের গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যায় পরতে হয়। তাই, খালি পেটে রসুন খেলে এটি আমাদের স্নায়বিক চাপ কমিয়ে এ সকল সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- শ্বসন : রসুন নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের কনজেশন, হাপানি, হুপিং কাশি ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। রসুন এ সকল রোগ আরোগ্যের মাধ্যমে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
- গিট বাতের সমাধান: রসুন গিট বাতের রোগে অনেক উপকার করে থাকে। নিয়মিত ২ কোয়া করে খেলে গিটের বাত সেরে যেতে পারে।
- শরীরের ফোড়া সারাতে: রসুনের রস শরীরের যে কোন পুজ ও ব্যথাযুক্ত ফোড়া সারাতে সাহায্য করে থাকে। যেখানে এই পুজ বা ফোড়া হবে, সেখানে রসুনের রস লাগিয়ে ১৫মিনিট পরে শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেললে অতিতাড়াতাড়ি সেইটার নিরাময় হয়।দাদ,খোস পাচড়া ধরনের চর্মরোগ থেকে রসুন উপকার দেই।চামড়ায় ফোসকা পড়ার যন্তনা থেকে মুক্তি দেয় এই রসুন।
- ব্রনের সমস্যা দূর করতে: রসুনের মধ্যে অনেক গুন আছে।এটি ব্রনের সমস্যায় অনেক সহায়ক হিসেবে কাজ করে। অনেক সময় শরীরে আঁচিল হয়ে থাকে, এই রসুনের রস আচিলের ক্ষেত্রে উপকার করে।
- পেটের কৃমি নিরাময়: রসুন পেটের কৃমি নিরাময়ে অনেক উপকার করে থাকে। সুতরাং রসুন দেহের অভ্যন্তরীণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং কৃমি ধ্বংস করে।
- যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: যৌন সমস্যা থাকলে এখনই নিয়মিত রসুন খাওয়ার গড়ে তুলুন। স্মরণাতীতকাল থেকেই নারী পুরুষ উভয়েরই যৌন উদ্দীপনা বাড়াতে এবং জননাঙ্গকে পূর্ণ সক্রিয় রাখতে রসুনের পুষ্টিগুণের কার্যকারিতা সর্বজনস্বীকৃত। রসুনে রয়েছে এলিসিন নামের উপাদান যা যৌন ইন্দ্রিয়গুলোতে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়।
রসুনের অপকারিতা ও সতর্কবার্তা:
- রসুন যত উপকার ততটা ক্ষতিকর। দিনে দুই কোয়ার বেশি কাঁচা রসুন খাওয়া যাবে না। রান্নায় এটি ব্যবহার হলেও দিনে মাত্র দুই কোয়া রসুন ব্যবহার করতে হবে। যাদের রসুন খাওয়ার ফলে এলার্জি হবার আশঙ্কা থাকে বা হয় তাদেরকে অবশ্যই কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- যাদের রসুন খাওয়ার ফলে মাথা ব্যথার সমস্যা হয়, বমির প্রাদুর্ভাব হয় বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাদের জন্য কাঁচা রসুন না খাওয়াই ভাল। আবার অতিরিক্ত খেলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতেও পারে তাই বেশি রসুন খাওয়া ঠিক নয়।
- অনেকের শরীর থেকে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না, অতিরিক্ত রসুন খাওয়া তাদের জন্য বিপদজনক। কারণ, রসুন রক্তের জমাট বাঁধার ক্রিয়াকে বাধা প্রদান করে। ফলে রক্তপাত বন্ধ হতে অসুবিধা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রসুন না খাওয়াই উত্তম।
- রসুন খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে অস্বস্তি বোধ করলে রসুন খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
- শিশুকে দুগ্ধদানকারী মায়েদের রসুন না খাওয়াই ভাল। কারণ রসুন খাওয়ার ফলে তা মায়ের দুধের মাধ্যমে শিশুরপাকস্থলীতে ঢুকে শিশুর যন্ত্রণার কারণ ঘটাতে পারে।
- অনেকের রসুনের গন্ধ সহ্য হয় না। এখন রসুনকে ওষধের বড়ি হিসেবে তৈরি করার জন্য তাদের সুপারিশ করা হয়েছে।
- রসুন নরম হয়ে গেলে বা সবুজ রঙ দেখা দিলে সেই রসুন কিনবেন না। কারণ এসব রসুনের কার্যগুণ নষ্ট হয়ে যায়। কেনার সময় মাঝারি আকারের রসুন কিনতে হবে।
- রসুন বন্ধ পাত্রে না রেখে খোলা পাত্রে রাখা ভাল। ভুলেও রেফ্রিজারেটরে রসুন রাখবেন না। এতে করে রসুন নরম হয়ে যাবে। নরম রসুন স্বাস্থ্যকর নয়। ভাঁজার জন্য বা কারী পেস্টের জন্য রসুন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।