প্রলয়ংকরী শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ফনির তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে দক্ষিণ ভারতসহ ভারতের উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ফনির প্রভাবে কলকাতাসহ দক্ষিণ ভারতে প্রবল বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাস আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন। ফণীতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কলকাতা বিমানবন্দরে বিমান চলাচল প্রাথমিকভাবে একদিনের জন্য বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সব বিমান বাতিল করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ওড়িষ্যার বিমানবন্দরে থেকে সব বিমান বাতিল করে দেয়া হয়েছে।
‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ ফনির প্রভাবে ওড়িষ্যার ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে আজ বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকেই সব ফ্লাইট বাতিল করে দেয়া হয়েছে। তবে কবে ফের বিমান চলাচল চালু করা সম্ভব হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। সৈকত শহর পুরির উপকূলে শুক্রবার দুপুরের দিকেই আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা ঘুর্ণিঝড় ফনির। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই পুরির আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি। এই কারণেই ভুবনেশ্বর থেকে সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ওড়িষ্যার পুরি থেকে ঘূর্ণিঝড় ফনি ৩৬০ কিমি দূরে অবস্থান করছিল। অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে ১৯০ কিমি দূরে ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ৫৫০ কিমি দূরে অবস্থান করছিল ঝড়টি। ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশার উপকূল এলাকা গোপালপুর, চাঁদবালি, পুরির ওপর দিয়ে ৩ মে সর্বোচ্চ ২০০ কিমি বেগে বয়ে যাবে। মাটিতে আছড়ে পড়ার পরে ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর ও উত্তর-পূর্বের দিকে ধেয়ে যাবে। এভাবেই খানিক শক্তি হারিয়ে প্রবল বেগে ঝড় হয়ে বাংলায় প্রবেশ করবে ফনি। বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার।
শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, বাংলাদেশেও ৪ মে সন্ধ্যায় প্রবেশ করবে ঘূর্ণিঝড় ফনি। বাতাসের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। গতিবেগ বাড়িয়ে উপকূলের দিকে প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফনি। বলা হচ্ছে, মাটিতে আছড়ে পড়ার সময় ওড়িষ্যায় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার। বাংলায় গতিবেগ হতে পারে ১১৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরাও আক্রান্ত হতে পারে। দিক আরও পরিবর্তিত হলে বাংলাদেশের বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। তবে এটি জানতে ৩-৪ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
যদি বাংলাদেশে ঝড় আঘাত না হানে, তাহলে স্থল নিম্নচাপের কারণে অনেক বৃষ্টিপাত পাব আমরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের (আইএমডি) তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়সংশ্লিষ্ট কারণে ২-৩ মে ভারতের মেঘালয় অববাহিকায় এবং ৬-৭ মে ভারতের মেঘালয়সহ বাংলাদেশের মেঘনা অববাহিকা, মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ফনি শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ৩-৪ মাত্রায় পরিণত হতে পারে। এর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটারে উঠতে পারে। ফনির সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল। এ জন্য উপকূলের ১৯ জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আগামী ৩ ও ৪ মে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্ত সংশ্লিষ্ট দফতর খোলা থাকবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফনির আশঙ্কা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব নৌযান বন্দরে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) উৎপল কুমার দাস জানিয়েছেন, ফনি সামনে রেখে উপকূলীয় ১৯ জেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোলরুম)। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক।