মিরাজ যে কারণে পাকিস্থানের বিপক্ষে সিরিজসেরার প্রাইজমানি নিহত রিকশাচালকের পরিবারকে দিতে চান
দুই টেস্টে ব্যাট হাতে ১৫৫ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ১০ উইকেট। এর মধ্যে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে, ২৬ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর, লিটন দাশের সঙ্গে অবিশ্বাস্য এক পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের এই জুটিতে ভেঙেছে একাধিক রেকর্ড।
বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতেছে। দুই ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ দুটি ম্যাচই জিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের জয় আসে ৬ উইকেটে। এই সিরিজ জয়ের পথে ব্যাট এবং বল হাতে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
রাওয়ালপিন্ডির এই দুই টেস্ট মিরাজের জন্য অন্য একটি বিশেষ মুহূর্ত ছিল। এই পারফরম্যান্সের জন্য দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো সিরিজ সেরার পুরস্কার পান তিনি। মিরাজ বলেন, এই পুরস্কার হাতে নিয়ে এই মুহূর্তটি তিনি কখনোই ভুলবেন না। এছাড়াও, সিরিজসেরার প্রাইজমানি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত রিকশাচালকের পরিবারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।
সিরিজ সেরার পুরস্কার পাওয়ার পর মিরাজ বলেন, ‘প্রথমে আমি আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই, যিনি আমাকে এই সুযোগ দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ। আমি সত্যিই খুব খুশি। দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো সিরিজ সেরা হয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত।’
মিরাজ তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দিয়ে বারবার দলের প্রয়োজন মেটানোর প্রমাণ দিয়েছেন। ব্যাট হাতে দৃঢ়তা দেখানোর পাশাপাশি, বল হাতেও ছড়িয়েছেন আলো। গত ৫ বছরে টেস্টে ৮ নম্বরে নেমে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ডও এখন তাঁর। ২৫ ইনিংসে ৩০.৯১ গড়ে করেছেন ৭১১ রান। ৮ নম্বরে ব্যাট করা কতটা কঠিন তা উল্লেখ করে মিরাজ বলেন, ‘একজন অলরাউন্ডার হিসেবে এটা খুবই কঠিন। ৮ নম্বরে ব্যাট করা সহজ নয়। আমি চেষ্টা করেছি স্ট্রাইক পরিবর্তন করে খেলতে এবং মুশফিক ও লিটন দাশের সঙ্গে ব্যাটিং উপভোগ করতে।’
রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানকে ২৭৪ রানে অলআউট করার ক্ষেত্রে মিরাজের অবদান ছিল বিশাল। ৬১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে নিজের বোলিং দক্ষতা প্রদর্শন করেন। নিজের পারফরম্যান্স সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘৫ উইকেট পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। এটি আমার জন্য উপভোগের মুহূর্ত। ইনশা আল্লাহ, ভবিষ্যতে আরও ভালো করার চেষ্টা করব।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা না পেয়ে মিরাজ সেই সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলিনি। তখন দেশে আমার হাতে অনেক সময় ছিল। টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ দিতে চাই, তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে এবং অনেক পরিশ্রম করেছে। তাদের কৃতিত্ব দিতে হয়। দেশের মাটিতে অনুশীলনের সময়ও আমি উপভোগ করেছি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমার পারফরম্যান্সে দলের সবাই খুব খুশি ছিল। তাদের সমর্থন আমার জন্য অনেক মূল্যবান। এই মুহূর্তটি কখনোই ভুলব না।’
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পর মিরাজ বাংলায় কিছু কথা বলার অনুমতি চান। এরপর তিনি জানান, সিরিজ সেরার প্রাইজমানি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত রিকশাচালকের পরিবারকে দেবেন। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো আমি ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছি। সম্প্রতি আমাদের দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়েছে, যেখানে অনেকে শহীদ হয়েছেন। এই আন্দোলনে এক রিকশাচালক আহত হয়ে পরে মারা যান। আমি এই ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার তাঁর পরিবারকে দিতে চাই।’