প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান। শেষ ৩২ বলে ৩৯ রান তুলেছে ভারত। শুরু আর শেষটা দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ম্যাচটা কি ভারত জিততে চেয়েছিল? বাসিত আলীর কণ্ঠে কিছুটা রোষ, কিছুটা হতাশা। ভারত ইচ্ছা করে ম্যাচ ছেড়ে দেবে—এমন তত্ত্ব কিছুদিন ধরে আওড়ে যাচ্ছেন পাকিস্তানের এই সাবেক ক্রিকেটার। কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের খেলা দেখার পর বাসিত আলীর মন্তব্য, মাঠে ভারতীয়দের ক্রিকেট খেলতে তিনি দেখেননি। এর বদলে ভারত নাকি পিকনিক করেছে! ভারত ম্যাচটা হারায় পাকিস্তানের সেমিফাইনাল সম্ভাবনা বড় ধাক্কা খেয়েছে। কালকের পরাজয়ের পর বাসিত আলী বলেছেন, ‘৩৩৭ রান তাড়া করার ম্যাচে প্রথম ১০ ওভারে, যখন বৃত্তের বাইরে দুজন ফিল্ডার, ওই অবস্থায় মাত্র ২৮ রান করেন, তাহলে তো বলতেই হবে ভারত ওই ১০ ওভার খুব বাজে খেলেছে। মাঠে তারা যেন পিকনিক করছিল। ব্যাটসম্যানরা জেতার বদলে বেশি করে চাইছিল ভালো ফর্মটা ধরে রাখতে। রোহিত সেঞ্চুরি করেছে নিজের জন্য। বিরাট কোহলিও ৬৬ রান করেছে হেলেদুলে। কেবল পান্ডিয়াই মেরে খেলে ৩৩ বলে ৪৫ রান করেছে।’
শেষ ১০ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ১০৪। হাতে ছিল ৬ উইকেট। টি-টোয়েন্টি যুগে এ রান তোলা অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু লেশমাত্র সেই প্রচেষ্টা করেননি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। বিশেষত ফিনিশারখ্যাত মহেন্দ্র সিং ধোনি ও কেদার যাদব। ভারতের হারে কণ্টকাকীর্ণ হয়ে গেছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকার সেমিফাইনাল যাওয়ার রাস্তা।
তাদের এমন ব্যাটিং দেখে রীতিমতো বিস্মিত ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হোসেইন। এবারের বিশ্বকাপে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকা পালন করছেন এ ইংলিশম্যান। তাই খুব কাছ থেকে দেখেছেন ধোনি-যাদবের কাণ্ডকীর্তি।
প্রত্যক্ষদর্শী নাসের বলেন, আমি বুঝতেই পারছি না। হচ্ছেটা কী? ভারতের যা দরকার, এটা যথেষ্ট নয়। তাদের রান দরকার। তারা কী করছে? ভারতীয় ভক্তরা মাঠ ছেড়ে বের হয়ে যাচ্ছে। নিশ্চিতভাবে তারা অবশ্যই ধোনির শট দেখতে চায়। তিনি আরো বলেন, এটা বিশ্বকাপের ম্যাচ, যেখানে শীর্ষ দুই দল খেলছে, খেলা সেরকমই হওয়া দরকার।সমর্থকরা চায়-তাদের দল লড়াই করুক, জিততে ঝুঁকি নিক।
ধোনি-যাদবের এমন ব্যাটিং দেখে তাজ্জব দুই ভারতীয় কিংবদন্তি সৌরভ গাঙ্গুলি ও ভিভিএস লক্ষ্মণও। ওই সময় কমেন্ট্রি বক্সে ছিলেন তারা। অজস্র প্রশ্ন ছুড়ে দেন দুই মহারথী। সৌরভ-লক্ষ্মণের প্রশ্ন, হাতে উইকেট থাকার পরও কেন এমন বিবর্ণ ব্যাটিং? ঠিক কী করতে চাইছে ধোনি-যাদব? ভারতের সাবেক অধিনায়কের কৌশলটাই বা কি? অবশ্য ম্যাচ শেষে এসবের জবাব দেন টিম ইন্ডিয়া অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তিনি বলেন, চেষ্টা করেছিলেন এমএস। তবে ইংলিশ বোলাররা ভালো বল করেছেন। সেজন্য বাউন্ডারি পাচ্ছিলেন না তিনি। চেষ্টা করব ঘুরে দাঁড়ানোর।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে টুইট করেছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওয়াকার ইউনিস। যে ম্যাচ জিততে কোনো চেষ্টাই করেনি টিম ইন্ডিয়া। ধোনির এমন ব্যাটিং দেখে বিস্মিত ওয়াকারও। ভারতের সাবেক অধিনায়ককে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। সাবেক পাক পেসার বলেন, এ সেই তুমি নও, ক্যারিয়ারে অতীতে যা করেছ। পাকিস্তান সেমিতে গেলে বা না উঠলে আমি মোটেও কষ্ট পাব না। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট- কিছু চ্যাম্পিয়নের স্পোর্টসম্যানশিপ পরীক্ষা হয়েছে। তাতে তারা মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ইংলিশদের ৩৩৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ২৮/১ রান তোলে ভারত। ওই সময় ক্রিজে ছিলেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। শেষ ৫ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ৭১ রান। হাতে ছিল ৫ উইকেট। টি-টোয়েন্টি যুগে এ রান তোলা অসম্ভব কিছু ছিল না। তবে ক্রিজে থাকা মহেন্দ্র সিং ধোনি বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি। অতীতে বহুবার এ রকম ম্যাচ ফিনিশিং করতে দেখা গেছে তাকে। ৩১ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৩১ রানে হেরে যায় ভারত।