ফ্রেঞ্চ লীগ ওয়ানে মঁপেলিয়েরকে ৫-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের শীর্ষস্থান আরও সুসংহত করেছে পিএসজি। তবে বড় জয় ছাপিয়ে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে নেইমার এবং কিলিয়ান এমবাপ্পের মেজাজ হারানোর ঘটনা সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফরাসি লিগে শনিবার নয়জনের মঁপেলিয়েকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা দৌড়ে ১৩ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে গেছে পিএসজি। ঘরের মাঠে একটি করে গোল করেছেন সারাবিয়া, ডি মারিয়া, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও কুরজাওয়া। অপর গোলটি আত্মঘাতী।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) পার্ক দেস প্রিন্সেসে অনুষ্ঠিত ম্যাচের ৩৮ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টারের কাছে এই সিদ্ধান্ত সঠিক মনে না হওয়ায় রেফারি জেরোমে বিসার্ডের কাছে তিনি কারণ জানতে চান। একপর্যায়ে নেইমার রেফারির সঙ্গে নাকে নাক মিলিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। তাতে অবশ্য রেফারির সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি।
নেইমারের ঘটনাটা প্রথমার্ধে। হলুদ কার্ড দেখে রেফারির দিকে তেড়ে দিয়েছিলেন ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড। বিরতির সময় টানেল দিয়ে সাজঘরে ফেরার সময় এ নিয়ে এক ম্যাচ অফিশিয়ালের সঙ্গে আবার লেগে যায় তার। নেইমারের কথা বুঝতে না পেরে তাকে ফরাসি ভাষায় কথা বলতে বলেছিলেন সেই ম্যাচ অফিশিয়াল। ক্ষুব্ধ নেইমার টানেলের দেয়ালে কিছু একটা ছুড়ে মেরে চিৎকার করে বলেন, ‘ফরাসি ভাষার নিকুচি করি আমি।’
পিএসজি যখন ৫-০ গোলে এগিয়ে, দ্বিতীয়ার্ধে দুটি পরিবর্তন করেছিলেন ম্যানেজার টমাস টুখেল। কিন্তু তা করতে গিয়েই গোল বাঁধল। দলের চতুর্থ গোলটি যার পা থেকে এসেছে, সেই এমবাপ্পেকে উঠিয়ে তার বদলে কাভানিকে নামিয়েছিলেন টুখেল। কিন্তু ২১ বছর বয়সী ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড এমবাপ্পে কোচের সিদ্ধান্তটি ঠিক মানতে পারেননি । টেকনিক্যাল এরিয়াতে কোচের সঙ্গে এক চোট বাক্যবিনিময় হয়ে গেছে।
ম্যাচের পর ফরাসি সংবাদমাধ্যম ক্যানাল প্লাসের সঙ্গে আলাপে টুখেল তার বিরক্তিটা চেপে রাখেননি, ‘তাকে অবশ্যই নিজেকে দলের একটা অংশ হিসেবে মনে করতে করতে হবে। ড্রেসিংরুমে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানতে হবে। এটা কঠিন না, কিন্তু জরুরি। মোদ্দাকথা, আমরা একটি দল, এই বিষয়টা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।’
“যেহেতু আমি দলের কোচ, সেহেতু সিদ্ধান্ত নেয়ার ভারটা আমার ওপরেই বর্তায়। ম্যাচ চলাকালে খেলোয়াড় পরিবর্তনের দায়িত্বটা আমাকে পালন করতে হয়। এক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনাগুলো (মাঠ থেকে উঠিয়ে নেয়ার পর এমবাপ্পের উত্তপ্ত প্রতিক্রিয়া) দলের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা ফুটবল খেলি, টেনিস নয়। এমবাপ্পে বুদ্ধিমান এবং ইতিবাচক একটা ছেলে, সুতরাং তার কাছ থেকে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া আশা করি না। আমাদের দলে পেশাদার একটা কাঠামো আছে, কিলিয়ানও সেটার অংশ। কিন্তু এই ঘটনায় মনে হবে ব্যাপারটা ঠিক ওরকম নয়। আমি রেগে যাইনি বটে, কিন্তু ব্যাপারটাতে খানিকটা হতাশ”।
এদিকে এই হ্যাপা সামলাতে না সামলাতে নতুন আরেকটা ঝামেলা চলে এসেছে টুখেলের সামনে। বুধবার লিগ ওয়ানের ম্যাচে নতেঁর বিপক্ষে মাঠে নামবে পিএসজি। কিন্তু তার আগে আজ রোববার নেইমার তার জন্মদিনের পার্টির আয়োজন করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে নেইমারের জন্মোৎসব পালনের বিষয়টিতেও যেন কিছুটা বিরক্তই হচ্ছেন টমাস টুখেল, “রবিবারে পার্টিটা না হলে ভাল হত। কিন্তু যেহেতু আমি শুধুই কোচ, নেইমারের বাবা-মা অথবা এজেন্ট নই, তাই এই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না।“ টুখেল নিজে নেইমারের জন্মদিনের পার্টিতে অংশ নেবেন কি না সে বিষয়টি নিয়ে অবশ্য সবাইকে ধোঁয়াশাতেই রাখলেন, “আমি যাব কি যাব না সেটা নিয়ে এখনই কিছু বলা কঠিন। পার্টিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এখনো বেশ কিছুটা সময় রয়েছে। অবশ্যই এই পার্টিটার জন্য খেলোয়াড়দের মনযোগ একটু অন্যদিকে নড়তে পারে, তবে সেটা আমি দেখছি। আমি খেলোয়াড়দের সাথে পার্টিতে অংশগ্রহণ নিয়ে নিজেদের ভেতর আলোচনা করতে চাই। যদি কিছু কড়া কথা খেলোয়াড়দের বলতে হয়, সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবেই বলতে চাই।“