পোর্তোর এস্টাডিও দো দ্রাগাওয়ে অনুষ্ঠিত সেই অসাধারণ ম্যাচে বার্নার্ডো সিলভার পাস থেকে ৬০ মিনিটে দুর্দান্ত গোলটি করলেন গনকালো গুয়েদেস। এই একমাত্র গোলেই নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রথমবার আয়োজিত উয়েফা নেশন্স লিগের শিরোপা জিতে নিলো রোনালদোর পর্তুগাল। বিশ্ব ফুটবলকে মেসি ও রোনালদো কী কী দিয়েছেন, সেটা নিয়ে কথা বলা বাহুল্য ছাড়া কিছুই নয়। উল্টো প্রশ্ন আসতে পারে, ফুটবলকে এই দুই মহারথী যা দিয়েছেন, ফুটবল কি তাদের সে ঋণ মেটাতে পেরেছে? তিন বছর আগেও বলা যেত, না, পারেনি। তত দিন পর্যন্ত ফুটবলের দুই মহাতারকার আন্তর্জাতিক ট্রফির ভান্ডার ছিল শূন্য। কিন্তু গত তিন বছরে ভাগ্য ফিরে তাকিয়েছে রোনালদোর দিকে। তিনি ইউরো জিতেছেন, দেশের হয়ে। কাল জিতলেন ইউরোপিয়ান নেশনস লিগের শিরোপা। রোনালদোর হাতে দুটি আন্তর্জাতিক ট্রফি দেখে মেসির কি একটু হলেও ঈর্ষা জাগে না?
২০১৬ সালে ইউরো জয়ের সঙ্গে ইউরোপীয় নেশনস লিগের শিরোপার তুলনা টানলে হবে না। ইউরো পৃথিবীর দ্বিতীয় সেরা আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা, বিশ্বকাপের পরপরই। সে ইউরোর ফাইনালে ফেবারিট ফ্রান্সকে হারিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে শিরোপা জয়ের আনন্দ, সম্মানটাই অন্য রকম। নেশনস লিগ এবারই প্রথম শুরু হওয়া টুর্নামেন্ট। ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। এর ট্রফি আন্তর্জাতিক ট্রফিই। কাল নেদারল্যান্ডস হারিয়ে রোনালদোর দল হাতে তুলল ইউরোপের আরেকটি সম্মান। অন্যদিকে জাতীয় দলের হয়ে মেসির অর্জনের ভান্ডার এখনো শূন্য। তিনবার কোপা আমেরিকা ও একবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও মেসিদের সহ্য করতে হয়েছে শিরোপা হারানোর যন্ত্রণা। চোখের সামনে অন্য দলের খেলোয়াড়দের শিরোপা নিয়ে উল্লাস করতে দেখেছেন। গোটা ক্যারিয়ারে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদোর সঙ্গে সমানে সমান টক্কর দিলেও এই এক জায়গায় আক্ষরিক অর্থেই পিছিয়ে পড়েছেন মেসি। এগিয়ে গেছেন পর্তুগিজ রাজপুত্র। অথচ আর্জেন্টিনা দলে নামকরা তারকাদের উপস্থিতি দেখলে যে–কেউই বলবে, শিরোপা জেতার কথা ছিল আর্জেন্টিনারই। বরং পর্তুগালেরই শিরোপাহীন থাকার কথা ছিল। সাধারণ মানের একটা দলের অসাধারণ খেলোয়াড় ছিলেন রোনালদো। একসময় উত্তর আয়ারল্যান্ডের যেমন ছিলেন জর্জ বেস্ট বা রোমানিয়ার গিওর্গি হ্যাগি, ওয়েলসের গ্যারেথ বেল কিংবা সুইডেনের জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। কিন্তু তিন বছর ধরে পর্তুগাল দলের যে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে, সে উন্নতি সব পূর্বানুমানকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে।
আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে পূর্ণ ছিল ম্যাচটি। কিন্তু ৬০ মিনিটে ওলন্দাজদের বিপক্ষে অসাধারণ একটি গোল আদায় করে নেয় পর্তুগিজরা। অ্যাটাকিং হাফ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে যান বার্নার্ডো সিলভা। বক্সের মধ্যে গিয়ে নিজে চেষ্টা করেন শট নেয়ার। কিন্তু ডাচ ডিফেন্ডারদের কারণে শট নেয়ারই চেষ্টা করেননি। তবে অসাধারণ একটি নাটমেগ উপহার দিলেন তিনি। ব্যাকহিলের আলতো ছোঁয়ায় বলটা ঠেলে দিলেন কিছুটা পেছনে। সেই বলটি পেয়ে যান ২২ বছর বয়সী গনকালো গুয়েদেস। বক্সের একেবারে ওপর থেকে ডান পায়ের জোরালো এবং লম্বা এক শট নেন তিনি। সেই বলটিই ডাচ গোলরক্ষক জেসপার সিলেসেনের হাত ফসকে চলে যায় পোস্টের ভেতরে। অথচ, ম্যাচের পরিসংখ্যান কিন্তু পর্তুগিজদের হয়ে কথা বলছে না। মাত্র ৪৩ ভাগ বল পজেশন ছিল পর্তুগালের। ৫৭ ভাগ ছিল ডাচদের দখলে। তবে, গোলে শট নিয়েছে বেশি পর্তুগালই। ১৮টি। এরমধ্যে অন টার্গেটই ছিল ৭টি। বিপরীতে নেদারল্যান্ডস শট নিয়েছে কেবল ৪টি। যার মধ্যে অনটার্গেট শট ছিল মাত্র ১টি। শেষ পর্যন্ত ট্রফি ভাগ্যটা পর্তুগালেরই থাকলো। ৩ বছর আগে ফ্রান্সকেও ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারেরমত ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল পর্তুগিজরা। যদিও ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের তুলনায় উয়েফা নেশন্স কাপের গুরুত্ব খুব বেশি নয়। তবুও লিগ পদ্ধতিতে এটা একটি মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট তো! যার প্রথম শিরোপাটা উঠলো ৫ বারের বিশ্বসেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর হাতে।