ফুটবল

পেরুকে উড়িয়ে ১২ বছর পর কোপা চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল

Brazil-Copa America Champion

এবারের কোপা আমেরিকা শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার ছিল ব্রাজিল। সেভাবে খেলেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে নাম লিখিয়েছিল তারা। ফাইনালি লড়াইয়েও ছন্দময় ফুটবল উপহার দিলেন সেলেকাওরা। পেরুকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে কোপা চ্যাম্পিয়ন হলেন তারা। ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে দগদগে এক ঘা হয়ে আছে ১৯৫০ সালের ‘মারাকানাজো’ ট্রাজেডি। এবার আর কোনো ট্রাজেডি নয়, উৎসবের রং ছড়ালো মারাকানা। হলুদ-নীলের জয় হলো, ১২ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা ঘরে তুলল ব্রাজিল।
এ নিয়ে ল্যাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নবমবার শিরোপা ঘরে তুললো ব্রাজিল। নেপথ্য নায়ক গ্যাব্রিয়েল জেসুস। নিজে গোল করে এবং সতীর্থকে দিয়ে করিয়ে ২০০৭ সালের পর দলকে কোপা ট্রফি জেতালেন তিনি। যদিও আনন্দের দিনে বিষাদময় অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। একপর্যায়ে লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল-পেরু। শুরু থেকেই শৈল্পিক ফুটবল উপহার দেয় সাম্বা দল। ১৫ মিনিটে প্রথম সুযোগেই এগিয়ে যায় তারা। পায়ের কারিকুরিতে দুজনকে ফাঁকি দিয়ে ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান জেসুস। অরক্ষিত অবস্থায় থাকা এভারটন দারুণ দক্ষতায় তা ধরে বল পাঠান জালে। এই আসর দিয়েই পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসা এ ফরোয়ার্ডের এটি তৃতীয় গোল।
ম্যাচে সব দিক থেকে এগিয়ে ছিল ব্রাজিলই। তবে ৭০ মিনিটের মাথায় গ্যাব্রিয়েল হেসুস দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার পর ১০ জনের ব্রাজিলকে কিছুটা চেপে ধরে পেরু, তবে ওই চেপে ধরা পর্যন্তই। সাফল্যের দেখা মেলেনি।
খেলার প্রথমার্ধের শুরুতে পেরু ভালো একটি সুযোগ পেয়েছিল। ২ মিনিটের মাথায় ফ্রি কিক থেকে ক্রিশ্চিয়ানো কুয়েভার ডান পায়ের শট একটুর জন্য গোলপোস্ট মিস করে। ষষ্ঠ মিনিটে মিস করেন রেনাতা তাপিয়া।
তবে ব্রাজিল সুযোগ পেয়ে আর মিস করেনি। ১৫ মিনিটের মাথায় গ্যাব্রিয়েল হেসুসের ক্রস থেকে বল পেয়ে ডান পায়ের ছোঁয়ায় দারুণ এক গোল করেন এভারটন (১-০)।
২৪ মিনিটে আরও এক গোল পেতে পারতো ব্রাজিল। কৌতিনহোর বক্সের মধ্য থেকে নেয়া শট একটুর জন্য লক্ষভ্রষ্ট হয়। ৩৬ মিনিটে মিস করেন রবার্তো ফিরমিনো। বাঁ পাশ থেকে অ্যালেক্স সান্দ্রোর লম্বা ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু সেটা পোস্টের একটুখানি উপর দিয়ে চলে যায়।
প্রথমার্ধ তখন প্রায় শেষ হবার পথে। ৪৪ মিনিটের মাথায় নিজেদের বক্সের মধ্যে থিয়াগো সিলভার হাতে বল লেগে যায়, পেনাল্টি পায় পেরু। পাওলো গুইরেরোর নেয়া পেনাল্টি কিক অ্যালিসন বেকার আটকে দেবার সুযোগই পাননি (১-১)।
তবে ব্রাজিল পেরুর সেই আনন্দের সময়টা প্রলম্বিত হতে দেয়নি। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ের তিন মিনিটের মাথায় পেরুর রক্ষণের ভুলেই বল পেয়ে যান আর্থার। সেটা আলতো টোকায় তিনি দিয়ে দেন বক্সের মধ্যে দৌড়ে যাওয়া গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে। হেসুসও চোখের পলকে সেটাকে বানিয়ে নেন গোল (২-১)।
দ্বিতীয়ার্ধেও দাপট দেখিয়ে খেলতে থাকে ব্রাজিল। তবে ৪৭ মিনিটে থিয়াগো সিলভা আর দানি আলভেজ, ৫১ মিনিটে কৌতিনহোর চেষ্টাগুলো জাল খুঁজে পায়নি। ৫৪ আর ৫৭ মিনিটে আরও দুটো লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন ফিরমিনো।
৬৯তম মিনিটে পেরুর কার্লোস জামব্রানোর সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে ছোটখাটো এক ফাউলেই দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে। ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
এরপরই কিছুটা চাঙা হয়ে উঠে পেরু। এ সময় বেশ কয়েকটি আক্রমণ গুছিয়ে উঠে তারা। ৭৪ মিনিটে বিপদ হতে পারতো ব্রাজিলের। বক্সের অনেক বাইরে থেকে নেয়া পেরুর এডিসন ফ্লোরেসের শট একটুর জন্য গোলপোস্ট মিস করে যায়।
এরই মধ্যে ম্যাচের ৮৬ মিনিটে সবচেয়ে বড় ভুলটি করে বসে পেরু। কয়েকজনকে কাটিয়ে প্রায় একক প্রচেষ্টায় বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন এভারটন। তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন পেরুর জামব্রানো। ভারের সাহায্য নেন রেফারি, যাতে সিদ্ধান্ত মেলে পেনাল্টির। আর সে পেনাল্টি থেকে গোল করেন রিচার্লিসন (৩-১)। শেষপর্যন্ত ওই ব্যবধানে জিতেই ১২ বছরের আক্ষেপ ঘুচায় ব্রাজিল।
এর আগে সবশেষ ২০১৩ সালে কোনো শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল। একই ভেন্যুতে ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালে স্পেনকে ৩-০ গোলে হারায় তারা। ৫ বছর পর কোনো বড় টুর্নামেন্টের শিরোপায় চুমু আঁকলেন তিতের শিষ্যরা।

See also  ভবিষৎ সাফল্যের জন্য নেইমারকে পাশে চান এমবাম্পে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *